বর্তমান বিশ্ব দিনদিন পরিবর্তিত হচ্ছে যার সাথে সাথে প্রযুক্তিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তারই সাথে প্রযুক্তিগত ব্র্যান্ডগুলি চায় না যে আমরা তাদের প্রোডাক্ট বা ডিভাইস থেকে দূরে থাকি। তাই তারা তাদের ডিভাইসগুলিতে নিত্যনতুন প্রযুক্তিগুলো যুক্ত করে থাকে। আমার আজকের বিষয় হচ্ছে মূলত অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের একটি ফিচার বা ফাংশন নিয়ে। আপনার স্মার্টফোনের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনটি যদি আপডেট হয়ে থাকে তাহলে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে আপনার স্মার্টফোনে একটি Focus Mode নামক ফিচার বা ফাংশন রয়েছে। অনেক সময় স্মার্টফোন দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করার ফলে আপনার মন মেজাজ এবং স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বা ফেলতে পারে। তো এর থেকে নিস্তার পেতেই মূলত এই ফিচার বা অফশনের সূচনা। আজকের এই টপিকে আমি আপনাদের অ্যান্ড্রয়েডের ফোকাস মোড এর বাস্তব-জীবনের সুবিধা এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে এটি প্রয়োগ করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
Focus Mode কী?
আমি নিশ্চিত আপনারা সকলেই Do not Disturb মুডের সাথে পরিচিত। যার মাধ্যমে সকল ধরনের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা হয় এছাড়াও নির্দিষ্ট কন্টাক্ট নাম্বারের ক্ষেত্রেও নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা যায়। এইরকম কিছু ফিচার এবং সাথে আরো কিছু ফিচার যুক্ত হয়ে মূলত Focus Mode এর সূচনা। এই মুডটি মূলত অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন ১০ থেকে শুরু হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন ১০ থেকে শুরু করে এর পরবর্তী ভার্সনগুলিতে সকল মোবাইল ব্র্যান্ডগুলি এটিকে Focus Mode হিসেবে সম্বোধন করেছে। শুধুমাত্র OnePlus ব্র্যান্ডের মোবাইলগুলিতে এটির নাম Zen Mode রাখা হয়েছে।
Focus Mode এর ফিচার সমূহঃ
ফোকাস মোড আপনাকে আপনার ফোনের অতিরিক্ত আসক্তি থেকে দূরে রাখে এবং আপনাকে আপনার কাজে "ফোকাসড" থাকতে সাহায্য করে। এখন আপনি যদি একজন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হন তবে আপনার ফোকাস মোডের ধরন দুই রকমের হতে পারে। একটি হচ্ছে মোবাইল ব্র্যান্ড দ্বারা প্রদত্ত ফোকাস মোড যেমন শ্যাওমি, স্যামসাং ইত্যাদি এবং আরেকটি হচ্ছে Android অপারেটিং সিস্টেম বা সফটওয়্যার দ্বারা প্রদত্ত আরেকটি ভিন্ন ফোকাস মোড। ব্র্যান্ড এর ফোকাস মুড থেকে অ্যান্ড্রয়েডের ফোকাস মুডটির কিছু অতিরিক্ত ফিচার রয়েছে। উল্লেখ্য কিছু ব্র্যান্ডের ডিভাইসে এই উভয় ফোকাস মুড একই থাকে।
জনপ্রিয় ও সেরা মোবাইল ব্র্যান্ডের Focus Mood এর ফিচারঃ
- আপনি একটি টাইমার পাবেন যা ১৮০ মিনিট (৩ ঘন্টা) ফোন থেকে আপনি কত সময় দূরে থাকতে চান তার উপর নির্ভর করে টাইম সেট করার ফিচার।
- সকল অ্যাপ থেকে আসা নোটিফিকেশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার ফিচার।
- মনমানসিকতা ঠান্ডা রেখে কোন কাজে ফোকাস করার জন্য প্রশান্তিদায়ক ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ শোনার ফিচার। সাধারণত ৪টি সাউন্ড দেওয়া থাকে তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ড আরও বেশিও দিতে পারে।
Android_এ Focus Mode চালু করাঃ
অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে Focus Mode মূলত সেটিংসের মধ্যে থাকা Digital Wellbeing এর মধ্যে পাবেন। এছাড়াএ এটি আপনি সহজে চালু করতে চাইলে স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন প্যানেলের সাহায্য নিতে পারেন। কারণ এটি সেখানে যুক্ত করা আছে।
ফোকাস মুড চালু করার জন্য মোবাইলের সেটিংস অপশনে যান। তারপর Digital Wellbeing & parental controls অপশনে ক্লিক করুন। তারপর লক্ষ্য করুন Ways to disconnect সেকশনের মধ্যে Focus Mode নামক অপশন এটি চালু করে দিন।
উল্লেখ্য এখানে ভার্সন বেদে পদ্ধতি আলাদা আলাদা থাকতে পারে। যেমন আমার মোবাইলে ফোকাস মুড এর মধ্যে দুইটি ক্যাটাগরি তৈরি করা আছে আবার চাইলে আরো তৈরি করা যাবে। আর কোনোগুলিতে হয়তো ক্যাটাগরি থাকবে না। আপনি চাইলে ক্যাটাগরি থেকে যেকোনো একটি নিতে পারেন অথবা নতুন করে একটি তৈরি করতে পারেন। তারপর কোন কোন অ্যাপকে এর আওতায় আনতে চান সেগুলো সিলেক্ট করুন এবং সময় নির্ধারণ করে দিন যে কতক্ষণের জন্য আপনি এটি সক্রিয় বা অ্যাক্টিভ রাখতে চাচ্ছেন।
সুতরাং এই ছিল মূলত আমাদের ফোকাস মুডের বিষয়। এখন কথা হচ্ছে এই ফোকাস মুড আমরা আমাদের কিরকম কাজে ব্যবহার করতে পারি বা এর সুবিধা ভোগ করতে পারি তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
Focus Mood এর ব্যবহারঃ
এটি এমন একটি ফাংশন যা এক একজনের এক একভাবে কাজে লাগতে পারে যেকোনো বয়সের যেকোনো পেশার লোকদের ক্ষেত্রে। আমরা সকলেই এর সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারি।
শিক্ষার্থীদের জন্য Focus Mood এর ব্যবহারঃ
আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি হয়তো আপনার ফোনে অতিরিক্ত গেমিং, অনলাইন ক্লাস এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণভাবে স্ট্রেন করতে পারে যা আপনার মস্তিষ্ক এবং মেজাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর এটি কিন্তু মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তাই আমি বলতে পারি এই দিক বিবেচনা করে আপনার জন্য এখন ফোকাস মোড এর প্রয়োজন। আপনি আপনার পড়ার সময় এবং বিশ্রামের সময় এটি ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি এটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কর্মরত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য Focus Mood এর ব্যবহারঃ
আপনি যদি একজন কর্মব্যাস্ত মানুষ হন তাহলে এই ফোকাস মুড আপনার কাজে আসতে পারে। যখন আপনি কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন এবং বিশ্রাম নিতে যাবেন তখন এটি চালু করার মাধ্যমে আপনি শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এছাড়াও আপনার কাজের মধ্যে ফোকাস দিতে যেমন মিটিং বা অন্যান্য জরুরি সময়ে আপনি এটি চালু করে কোনরকম ডিস্টার্ব ছাড়াই আপনি আপনার কাজটি সম্পাদন বা সম্পন্ন করতে পারবেন।
স্ট্রেসড আউট মায়েদের জন্য Focus Mood এর ব্যবহারঃ
মায়েদের মধ্যে এখানে একজন গৃহিণীকে বুঝানো হয়েছে। একজন গৃহিণী ২৪×৭ ঘন্টা পুরো পরিবার বা বাড়ি এবং সন্তানদের পরিচালনা করে থাকেন। যা করতে করতে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে স্ট্রেস আউট কাজ করে। তো মায়েদের বা গৃহিণীদের জন্য ফোকাস মোড হল সেই সমস্ত চাপ থেকে মানসিক শান্তি পাওয়ার একটি উপায়। সর্বোপরি বলতে গেলে একজন মায়ের স্বাস্থ্য তার শিশু এবং তার পরিবারের মতোই অপরিহার্য। অ্যান্ড্রয়েডের এই ফিচারটি মায়েদের বা গৃহিণীদের জন্য খুবই সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
তো এই ছিলো আমাদের আজকের Android এর Focus Mood নিয়ে তৈরি করা টপিকের মূল বিষয়বস্তু। আশা করি অ্যান্ড্রয়েড এর এই ফিচারটি সম্পর্কে যাদের এতোদিন কোনো ধারণা ছিলো না তারা আজকে মোটামুটি হলেও ধারণা নিতে পেরেছেন। যেহেতু এই ফিচার সম্পর্কে ধারনাটি নিয়েই ফেলেছেন তাহলে এখন থেকে আপনার বাস্তব জীবনে এর সুবিধা ভোগ করার জন্য এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for your comment.