বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড খুবই প্রয়োজনীয় এবং আবশ্যকভাবে থাকতে হয়। আর তা না হলে আমাদের দেশের ভিতর বিভিন্ন কাজেক্ষেত্রে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। তো আমার আসলে এতকিছু বলার কারণ হচ্ছে, একজন নাগরিক হিসেবে আইডি কার্ডের মত আমাদের পাসপোর্ট থাকাটাও জরুরী। এতে করে দেশে বিভিন্ন সুযোগের পাশাপাশি আপনি যদি কখনো বিদেশে অর্থাৎ দেশের বাহিরে সুযোগ পান তখন ঐ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারবেন। তার জন্য প্রথম শর্তটিই হলো পাসপোর্ট। এখন পাসপোর্ট যদি করতে হয় তাহলে আমাদেরকে সর্বপ্রথম অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আর এই আবেদন করার সময় যদি কোন কারণে কোন কিছু ভুল হয় বা অন্য কোন কারণে আবেদনটি বাতিল করার প্রয়োজন পড়ে তখন কী করবেন তা নিয়েই আমাদের আজকের এই পোস্ট।
কাহিনী সংক্ষেপ:
আমি আসলে প্রথমে আমার সাথে ঘটা বিষয়টি আপনাদের সাথে শেয়ার করি। তাহলে আপনাদের পোস্টের মূল বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। আমি যখন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি তখন পাসপোর্ট অফিস হিসেবে ঢাকা আগারগাঁওয়ের কার্যালয় নির্বাচন করি। বলে রাখা ভালো আপনি যদি ঢাকা আগারগাঁওয়ের কার্যালয় অর্থাৎ প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করে থাকেন তাহলে তারা একটা সিডিউল দিবে আপনাকে। ঐ সিডিউল অনুযায়ী সেখানে উপস্থিত হয়ে ছবি এবং ফিঙ্গার দিতে হয়। আর বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোন পাসপোর্ট অফিসে কোন সিডিউল দেওয়া থাকে না। আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী আপনি যেকোন সময় সেখানে উপস্থিত হয়ে ছবি এবং ফিঙ্গার দিয়ে আসতে পারবেন। তো আমার ক্ষেত্রে এমনি ঘটেছিল। আমি ঢাকায় থাকার কারণে আবেদন করার সময় ঢাকা আগারগাঁওয়ের কার্যালয় নির্বাচন করি। আর কোন কারণে ঢাকা থেকে আমার গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। এছাড়াও আমার পাসপোর্টটি করাও আমার জন্য জরুরী হয়ে পড়ে। এখন সমস্যাটি দাঁড়ায় সিডিউলের কারণে। কারণ আমি প্রধান কার্যালয় নির্বাচন করায় আমাকে অনেক দেরিতে সিডিউল দেওয়া হয়। তখন আমি চিন্তা করি আবেদনটি বাতিল করার জন্য। কিন্তু বাতিল করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার পর দেখি এটা বেশ ঝামেলার। কেননা আমি যদি আবেদনটি বাতিল করতে চাই তাহলে বাতিলের জন্য একটি দরখাস্ত লিখে আমাকে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে স্ব-শরীরে জমা দিতে হবে। তো এর জন্য আমি বিকল্প পথ খুঁজি। আর এটা খুঁজতে গিয়ে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়। আর সেটাই এখন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আমি দ্রুত পাসপোর্ট করার জন্য অর্থাৎ সিডিউলের অপেক্ষায় না থেকে ঢাকায় না করে নিজের জেলায় নতুন করে আবেদন করার জন্য প্রফেশনাল একজনের স্মরণা পন্ন হই। তখন আমি উনাকে বললাম যে আমার উপরোল্লিখিত সমস্যা এখন কি নতুন করে আবেদন করা যাবে কিনা। তখন তিনি বললেন যাবে। তো আমি বললাম কিভাবে? কারণ একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দ্বারা আবেদন করার পর ঐটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আর দ্বিতীয়বার আবেদন করা সম্ভব না। কিন্তু তিনি যেহেতু বললেন পারবেন। তখন আমি তার মাধ্যমে নতুন করে আবার আবেদন করার উদ্যোগ নেই। আর তখনই লক্ষ করলাম তিনি আবেদন করেছেন অন্যভাবে। এটাই হলো মূলত আমাদের আজকের পোস্টের গোপন টিপস। উনি নতুনভাবে আবেদন করার সময় আমার যে আইডি কার্ড নাম্বারটি ছিল সেটির একটি সংখ্যা পরিবর্তন করে আবেদন করেছেন। কারণ যেহেতু আমার আইডি কার্ড নাম্বার দিয়ে এর আগেই আবেদন করা আছে। সেহেতু এখন আর আমার আইডি কার্ড নাম্বার বসালে আর আবেদন করা যাবে না। তাই তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেছেন। তো তিনি কিভাবে আবেদন করেছেন তা আমরা নিচে থেকে দেখে নেই।
আবেদন করার পদ্ধতি: পূর্বের আবেদনটি বাতিল না করে নতুন করে আবেদন করার জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা আমি আমার বিষয়টা দিয়ে বুঝাচ্ছি তাই এখানে ভালো করে মনোযোগ দিবেন। উদাহরণ স্বরূপ ধরেন আমার আইডি কার্ড নাম্বার ছিল ১৯২৩৭৪৬৩৪৭ তো আমি এই নাম্বার দিয়ে এর আগে আবেদন করে ফেলেছি। এখন চাইলে আর নতুন করে আবেদন করতে গেলে এই নাম্বারটি দিলে আর আবেদন নিবে না। তাই তিনি ১৯২৩৭৪৬৩৪৭ এর জায়গায় ১৯২৩৭৪৬৩৪৮ বসিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ পুরো নাম্বারটি ঠিক রেখে শেষের নাম্বার ৭ এর স্থলে ৮ বসিয়ে দিয়েছেন। আর যারফলে আবেদনটি নিয়ে নিয়েছে। এখানে নতুন করে আবেদন করার সময় আপনার সকল ডাটা ঠিক রেখে শুধুমাত্র আইডি কার্ডের নাম্বারটি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল দিয়েছে। এখন আপনি বলতে পারেন যে, এটা তো মারাত্মক ভুল। যেটা আমার পাসপোর্টের মধ্যে ভুল আসবে। হুম ঠিক বলেছেন সেটা নিয়ে আমি পরে আসতেছি যে এর জন্য আপনার পরবর্তীতে করণীয় কী।
পেমেন্ট করার পদ্ধতি: আমি যখন প্রথম আবেদন করেছিলাম তখন কিন্তু পেমেন্ট করি নাই অর্থাৎ পাসপোর্ট করার যে ফি'টা ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয় তা আমি করি নাই। কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল যে, যখন আমার ছবি এবং ফিঙ্গারের সিডিউলটি কাছাকাছি চলে আসবে তার দুই একদিন আগে পেমেন্ট করব। যারফলে আর আমার প্রথম আবেদনের ফি পরিশোধ করা হয় নাই। আর এই জন্য আমি বাড়তি খরচ থেকে বেচে গেলাম। তো এখন যদি আমি আমার আইডি কার্ডের নাম্বার দিয়ে পেমেন্ট করি তাহলে তো সেটি আমার পূর্বের আবেদনের ফি হিসেবে গণ্য হবে। তাই তিনি এর জন্যও অন্য একটি পন্থা অবলম্বন করেছেন।
পন্থাটি হলো প্রত্যেকটি পরিচয়পত্রের দুইটি করে নাম্বার থাকে। একটি হলো ১০ ডিজিটের আর আরেকটি হলো ১৭ ডিজিটের। যারা নতুন করে ভোটার হয় তাদের আইডি কার্ডে ১০ ডিজিটের নাম্বার হয়। আর যারা এর আগে ২০০৭, ২০১২ তে গণহারে ভোটার হয়েছেন তাদের আইডি কার্ডের নাম্বার সাধারণত ১৭ ডিজিটের হয়ে থাকে। তো এইরকম ১৭ ডিজিটের যে আইডি কার্ডগুলো সেগুলোর ১০ ডিজিটের একটা নাম্বার আছে। আবার যেগুলো ১০ ডিজিটের সেগুলোর ১৭ ডিজিটের নাম্বার আছে। তো আপনি আপনার আইডি কার্ডের দুইটি নাম্বারের মধ্যে গোপন নাম্বারটি কিভাবে বের করবেন তা জানতে এখানে ক্লিক করুন। আর আমার আইডি কার্ডের নাম্বার ছিল ১০ ডিজিটের। তাই তিনি কি করেছেন আমার ১৭ ডিজিটের আইডি কার্ড নাম্বারটি বের করে সেই নাম্বারে ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছেন। আর এতে করে পেমেন্টটা আমার আইডি কার্ডের বিপরীতেই অর্থাৎ উপরেই হয়েছে।
এইবার আপনার করণীয়:
আপনার আবেদন এবং পেমেন্ট অর্থাৎ পাসপোর্টের ফি প্রদান করা তো হয়ে গেল। এখন আপনি আপনার সুযোগ অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি এবং ফিঙ্গার দিতে যাবেন। আর সাথে আবেদন কপি, অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পাসপোর্টের ফি প্রদানকৃত ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত চালান কপিটি নিয়ে যাবেন এখানেই হলো আপনার মূল কাজ। ঠিক যখন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা আপনার ছবি তুলবে এবং ফিঙ্গার নিবে তখনই আপনাকে উক্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে যে, জনাব আমার আবেদন কপিটিতে আমার আইডি কার্ড নাম্বারটি ভুল রয়েছে। কোন সংখ্যাটি ভুল রয়েছে এবং সঠিক সংখ্যাটি কি হবে তা বলবেন। আর তখনিই ঐ কর্মকর্তা কম্পিউটারে পাসপোর্টের সার্ভারে আপনার ভুল সংখ্যাটি সঠিক করে দিবেন। আর আপনার কাজ হবে ছবি এবং ফিঙ্গার দেওয়ার পর ঐ কর্মকর্তা আপনার হাতে যখন একটি ডেলিভারি স্লিপ দিবে। এটিতে ভালো করে লক্ষ করবেন যে, আপনার আইডি কার্ড নাম্বারটি ঠিক করা হয়েছে কিনা। যদি দেখেন ঠিক রয়েছে। তাহলে আপনার আর চিন্তা করার কিছু নেই। আপনি আপনার পাসপোর্টটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবং সঠিক ডাটা সহ পেয়ে যাবেন।
তো এইভাবে আপনি উপরোল্লিখিত গোপন টিপসটি ফলো করে আপনার পূর্বের ফাইনাল সাবমিটকৃত আবেদন বাতিল করার জন্য দরখাস্ত না দিয়ে নতুন করে এর বিপরীতে আবেদন করতে পারবেন কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। তবে আমার প্রস্তাব থাকবে যদি আপনার পূর্বের আবেদনটি বাতিল করার আমার মত বেশি ঝামেলা না হয়ে থাকে অর্থাৎ বাতিল করতে দরখাস্ত করাটা আপনার জন্য ঝামেলা না হয়। তাহলে বাতিল করার জন্য দরখাস্ত করাটাই ভালো হবে। তাতে করে এটা নিয়মানুযায়ী কাজ হবে আর আপনিও সুরক্ষিত থাকলেন। আশা করি পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। যদি পোস্টটি আপনাদের উপকারে এসে থাকে তাহলে একটি লাইক ও কমেন্ট করে যাবেন। ছবি: সংগৃহীত।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for your comment.