বাংলাদেশের জায়গাজমিন নিয়ে এই পর্যন্ত কয়েকটি জরিপ হয় যেগুলোকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়। এই পর্যন্ত যতগুলো জরিপ হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, CS, SA, RS ও City জরিপ খতিয়ান। এই খতিয়ানগুলো এখন আমাদের জায়গাজমিন নিয়ে যত ধরনের কাজ আছে, সব কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের এই খতিয়ানগুলো সম্পর্কে জানতে হবে যে, কোন খতিয়ান কোন সময়ের জরিপে হয়েছে। আসল কথা হলো এই খতিয়ানগুলো দেখতে প্রায় একইরকম। তাই আমরা সাধারণরা বুঝতে পারি না যে, কোনটা কোন খতিয়ান। অর্থাৎ কোনটা CS, কোনটা SA, কোনটা RS. এই খতিয়ানগুলোকে আলাদা আলাদা করে চিনতে আপনাকে কিছু উপায় বা পদ্ধতি জানতে হবে। আর তা নিয়েই আমার আজকের এই পোস্ট বা টিউটোরিয়াল। যা পড়ার মাধ্যমে আপনি একদম সহজে CS, SA ও RS খতিয়ানগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে চিনতে পারবেন। তো চলুন আজকের বিষয়টি ভালো করে বুঝতে নিচে থেকে কয়েকটি ছবিসহ বিস্তারিতভাবে জানা যাক।
প্রথমে এই CS, SA, RS ও City জরিপ খতিয়ান কী? তা আমরা জেনে নেই। খতিয়ান হলো জরিপ বিভাগ কর্তৃক সরেজমিনে জমিতে গিয়ে জমির মালিকানা বিবরণ ও নকশা তৈরি করে যে রেকর্ড প্রকাশ করা হয়, তাকে সাধারণত খতিয়ান বলে। আমাদের দেশে এই পর্যন্ত যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ জরিপ পরিচালিত হয়েছে সেগুলো হলো - CS, SA, RS ও City জরিপ। এখন আমরা এই খতিয়ানগুলো সম্পর্কে নিচে থেকে বিস্তারিত জানবো।
CS (সি,এস) খতিয়ান : এই খতিয়ানটি হলো ভারত উপমহাদেশের প্রথম জরিপকৃত খতিয়ান। যা ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮৯ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়। এটির মাধ্যমে পুরো ভারত উপমহাদেশের সকল জমির নকশা প্রস্তুত এবং প্রত্যেক মালিকের জন্য দাগ নম্বর দিয়ে এই খতিয়ানটি তৈরি করা হয়। CS খতিয়ান চিনবার উপায় হচ্ছে, (১) এটি হবে দুই পৃষ্ঠার অর্থাৎ উভয় পৃষ্ঠার হবে। (২) এই খতিয়ানটি হবে লম্বালম্বি উপরের ছবির মত। যাকে ইংরেজিতে লিগেল এবং প্রোট্রেইট সাইজের পেপার বলে। (৩) ছবির মত এই খতিয়ানটির প্রথম পৃষ্ঠাতে জমিদার এবং প্রজার নাম থাকবে। এই জরিপের সময় জমিদারি প্রথা ছিল। তাই জমিটি যেই জমিদারের আওতাভুক্ত ছিল এবং জমিদারের যে প্রজার ছিল তাদের নাম উক্ত খতিয়ানটিতে উল্লেখিত হয়েছিল।
SA (এস,এ) খতিয়ান : এই খতিয়ানটি হলো পাকিস্তান শাসনামলে জরিপকৃত খতিয়ান। ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগ হলে আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হই। আর এই পাকিস্তান শাসনামলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। তাই আবার ভূমি জরিপ করার প্রয়োজন পড়ে। যার ফল স্বরূপ ১৯৫৬ সালে পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলাদেশ আবার জরিপ করা হয়। যাকে SA জরিপ খতিয়ান বলে। তখন এই জরিপটি দ্রুততার সাথে করাতে অনেক ভুল-ভ্রান্তি হয়। তারপরও SA খতিয়ানটি এখনও জায়গাজমিনের ব্যাপারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। SA খতিয়ান চিনবার উপায় হচ্ছে, (১) এই খতিয়ানটি হবে এক পৃষ্ঠার। (২) এই খতিয়ানটি ছবির মত আড়াআড়ি হবে। যাকে ইংরেজিতে ল্যান্ডস্কেপ বলে। (৩) স্ক্রিনশটের মত এই খতিয়ানটির ডানপাশে সাবেক খতিয়ান CS এবং হাল নম্বর থাকবে।
RS (আর,এস) খতিয়ান : এই জরিপটি করার মূল কারণ হচ্ছে SA জরিপ খতিয়ান ভুল থাকার কারণে। এই জরিপটি জমি, মালিক ও দখলদারের তথ্য নিয়ে সম্পন্ন করা হয়। এখন এই খতিয়ানটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খতিয়ান। RS খতিয়ান চিনবার উপায় হচ্ছে, (১) এই খতিয়ানটি ১/২ পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। (২) এই খতিয়ানটি হবে লম্বালম্বি উপরের ছবির মত। যাকে ইংরেজিতে লিগেল এবং প্রোট্রেইট সাইজের পেপার বলে। (৩) ছবির মত এই খতিয়ানের একদম উপরে ডানপাশে লেখা থাকবে "রেসার্ভে নং।" যা এই খতিয়ানটি চিনবার একদম সহজ পথ।
City (সিটি) জরিপ খতিয়ান : এটির আরেক নাম ঢাকা মহানগর জরিপ। যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। এই খতিয়ানটি চিনবার উপায় হচ্ছে, (১) এই খতিয়ানটি হবে আড়াআড়ি। যাকে ইংরেজিতে ল্যান্ডস্কেপ বলে। (২) এই খতিয়ানটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার টাইপকৃত হবে। যা দেখতে ঠিক উপরের ছবিটির মত।
অনেক তো বললাম, এইবার আমরা আজকের এই টিউটোরিয়ালের একদম শেষপ্রান্তে চলে এসেছি। শেষ কথায় বলতে চাই, আপনি যদি পোস্টটি ভালো করে পড়ে থাকেন। তাহলে এখন থেকে যেকোনো খতিয়ানকে একদম সহজে চিনতে পারবেন। আজকের বিষয় সম্পর্কে কারো যদি কোনো জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে তা কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে করতে পারেন।

Advertise With Us






0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for your comment.